স্টাফ রিপোটার:-
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ মোগরাপাড়া কলেজ রোড যানজট দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সোনারগাঁ থানা রোডে এই যানজটের মাত্রার তীব্রতা। মূল সড়ক তো বটেই ফুটপাতগুলো দিয়ে হাঁটার কোন সুযোগ নেই। থানা রোডের মার্কেট মালিকগণ এক ইঞ্চি জায়গা ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। কোনটি নিজস্ব জায়গা আর সরকারি জায়গা বুঝার কোন উপায় নেই। যে যার মত করে ফুতপাতের জনগণের হাটাচলার রাস্তায় অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে নিরবে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ জনগণ।এ ব্যাপারে বলার মত কেউ নেই, দেখাও কেউ নেই।
সরেজমিনের দেখা যায় যে, ফুট ওভার ব্রীজ সংলগ্ন, চৌরাস্তা জামে মসজিদের সামনে, আইয়ুব প্লাজা, এম রহমান প্লাজা, মোস্তফা ম্যানশন, স্বপ্নদ্বীপ শপিং মল, জালাল টাওয়ার সহ ঈদগাহ পর্যন্ত মার্কেটের মালিকগণ এবং বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা সরকারী পাকা রাস্তার উপর ফুটপাত বসিয়ে জনগণের রাস্তা বন্ধ করে নীরবে চাঁদাবাজি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ফুটপাতের দোকানদারদের উৎপাতে জনগণের চলাচলের রাস্তা নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে মূল পাকা রাস্তার উপর দিয়ে চলাচল করতে হয় পথচারীদের।
অভিযোগ উঠেছে, ফুটপাতে এসব দোকান বসিয়ে হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে মালিকগণ ও বিভিন্ন দলের নেতা কর্মীরা। চাঁদাবাজদের একটি চক্রও চাঁদার টাকা দিয়েই অস্থায়ীভাবে এখানে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে ঠিক কারা এ চাঁদা আদায় করেন তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ সবাই। তাদের দাপটে প্রশাসন ফুটপাত দখলে থাকা হকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেনা।
অপর দিকে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ডিগ্রি কলেজ রোডের রজ্জব আলী ম্যানশন, আম্বিয়া প্লাজার, জোহরা ম্যানশন, আহাদ প্লাজা, মামুন প্লাজা, জলিল প্লাজা, নূরা বেপারী মার্কেট পর্যন্ত মার্কেটের সামনে সহ পুরো রাস্তা অবৈধ হকারদের এসব দোকান আছে প্রায় হাজারের অধিক। সড়কের দুপাশ যেন পুরোটাই দখলে রেখেছে অস্থায়ী হকাররা। আর ফুটপাতে বসেছে ভাসমান নানা দোকান। ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, ফুটপাতে বসানো দোকান বুঝে ব্যবসার ধরণ বুঝে দৈনিক সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলে চাঁদাবাজরা। তারাই জনগুরুত্বপূর্ণ মার্কেট গুলোর সামনের ফুটপাত দখল করে দোকান বসাতে সহযোগিতা করে হকারদের।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিজের বাচ্চাকে নিয়ে আসেন গফুর মিয়া। তিনি জানান, সড়কটি এমনেই ভেঙ্গে চৌচির হয়ে হয়ে গেছে এর মধ্যে আবার ফুটপাত জুড়ে অস্থায়ী শরবতের দোকান, চশমার দোকান, ফলের দোকান, চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান, ফুচকার দোকান, আচারের দোকান, জুতার দোকান, সবজির দোকান, ভাজা পোড়ার দোকান গড়ে তুলেছে হকাররা। যার ফলে পুরো সড়কটি সঞ্জালে পরিণত হয়েছে। মাত্র দুই মিনিটে রাস্তা পার হতে কখনো কখনো দুই ঘন্টাও পার হয়ে যায় । বাধ্য হয়ে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান অনেকে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই।
সোনারগাঁও মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, সোনারগাঁও থানা রোডের যানজটের মূল কারণ চাঁদাবাজি। এমন ছোট ও ভাংগাচূড়া রাস্তায় কোম্পানির ভারী যানবাহন চলাচল, অতিরিক্ত তিন চাকার গাড়ি, তার উপর রাস্তার দু'পাশে সড়কের মাঝেও অনেকে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন। মূলত থানা রোড হকার ইস্যুর নেপথ্যে রয়েছে কোটি টাকার চাদাঁবাজি। সোনারগাঁও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলাচল এই রোডেই। সবকিছু চোখে দেখার পরেও নিশ্চুপ ভূমিকায়। তাছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহ সাব-রেজিস্টার অফিস কর্মকর্তারাও চলাচল করে এই রোডে। কেউ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
সরকারি চাকুরীজীবী এক ভাই জানান, সোনারগাঁয়ে মাঝে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের প্রতি সকল জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতা। এই সড়ক দিয়েই উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভূমি অফিস, মুক্তিযোদ্ধা অফিস, সাব-রেজিষ্টার অফিস যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু হকাররা পুরো থানা রোডের জায়গা দখলে নিয়ে নিয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কোন দায়িত্ব পালন করছেনা।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও বলেন, এ রোডটি সবসময় যানজট লেগে থাকে তাই আমরা আইন-শৃঙ্খলার মাসিক মিটিংয়ের প্রস্তাব রেখেছি এবং কোম্পানির ভারী যানবাহন চলাচলের বিষয়টি কথা বলে নির্দিষ্ট সময়ে বেঁধে দেব। রাস্তার দুপাশে ফুটপাত বসানো নিয়ে মার্কেট মালিকদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে জনস্বার্থে সকলের সচেতন হওয়া দরকার যাতে পাবলিক ভোগান্তিতে না পড়ে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: উজ্জল হোসেন মাসুম (এমবিএ),
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলার কথা. All rights reserved.