মোঃ বেল্লাল ভালুকা প্রতিনিধিঃ-
ময়মনসিংহের ভালুকায় এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া ছাত্রকে সালিশ থেকে হাতকড়া পড়িয়ে ধরে এনে থানায় নিযার্তণ ও মোটা অংকের টাকার দাবিতে মাদক মামলা দিয়ে ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকী দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে জামিনে এসে ভূক্তভোগী পরিবার বিচার চেয়ে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার বরাবর দেয়া অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ ডাকাতিয়া গ্রামের আলী আজগরের ছেলে বেসরকারী সতীশ দিপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ ইন ইংলিশ বিভাগে অধ্যায়নরত সুমন মিয়া গত ২৪ জুলাই স্থানীয় হোসেনপুর গিলারচালা বাজারে যান। বাজারে প্রতিবেশি আনোয়ার হোসেনের ছেলে জাহিদ হাসান আগুণের সাথে অনেকদিন পর দেখা হয়। তখন সুমন সখিপুর মুজিব কলেজে পড়ার সময় আগুণকে দেয়া হাওলাদ টাকা ফেরত চাইলে দু’জনের মাঝে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে বাজারের লোকজন ঝগড়া থামিয়ে স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য সালিশ বসে। এসময় এসআই রুহুল আমিন (২) সুমনকে সালিশ থেকে হাতকড়া পড়িয়ে থানায় নিয়ে আসেন এবং থানার দ্বিতলায় নিয়ে একটি চেয়ারে বসান। এসময় এসআই রুহুলের সামনেই ওই রুমে বসে থাকা এসআই ইকবাল তাকে তার রুল দিয়ে সুমনের হাতের কুনুই ও পায়ের জয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে নিযার্তন চালানো হয়। এতে সুমন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে জ্ঞান ফিরলে তাকে সারা রাত থানা হাজতে রাখা হয়। সকালে সুমনের মা থানায় গেলে এসআই ইকবাল তার মায়ের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন এবং না দিলে তার ছেলের বিরুদ্ধে মাদক ও অপহরণ মামলা দিয়ে ক্রস ফায়ারে হত্যার হুমকী দেয়া হয়। পরে এসআই রুহুল আমিনের কাছে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়। তখন এসআই রুহুল আমিন সুমনের মাকে জানান, কিছুক্ষনের মধ্যে ফিফটি ফোরে আপনার ছেলেকে চালান করে দিচ্ছি, কোর্টে যাবে আর আসবে। পরে দেখা গেছে, জাহিদ হাসান আগুণকে বাদি করে মিথ্যে চুরির মামলা দিয়ে সুমনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। মামলায় সুমনের ভাই শাহিন ও প্রতিবেশি দিনারসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামী করা হয়। পরে একদিন হাজতবাসের পর সুমন জামিনে বাড়ি এসে ঘটনার বিচার চেয়ে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
নিযার্তণের শিকার সুমন মিয়া জানান, আগুনের কাছে পাওনা টাকা চাওয়ায়, তার সাথে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসআই রুহুল আমিন ও এসআই ইকবাল আমার সাথে এসব আচরন কনে। শুধু তাই নয় আমার মায়ের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করা হয় এবং না দিলে মাদক ও অপহরণ মামলা দিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকী দেয়া হয়। তাই ঘটনার বিচার চেয়ে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।নিযার্তণের শিকার সুমনের মামা সাবেক ইউপি মেম্বার, ৮ নম্বর ডাকাতিয়া ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি ও উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল ইসলাম জানান, তুচ্ছ ঘটনায় তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া ভাগিনাকে স্থানীয় একটি সালিশ থেকে হাতকড়া পড়িয়ে থানায় নিয়ে অমানসিক নিযার্তণ চালানো হয়। এমনকি মোটা অঙ্কের টাকার দাবিতে মিথ্যে মামলা দিয়ে ক্রসফায়ারেরও হুমকী দেয়া হয়। পরে চুরির মামলা দিয়ে সুমনকে আদালতে প্রেরণ করেন এসআই রুহুল আমিন।
ভালুকা মডেল থানার এসআই রুহুল আমিন (২) সুমনকে চুরির মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি ওই এলাকায় ডিউটিতে ছিলাম। খবর পেয়ে চুরির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে সুমনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয় এবং পরদিন চুরির মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। টাকা দাবি ও ক্রসফায়ারের বিষয়টি বানোয়াট ও মিথ্যে।
ভালুকা মডেল থানার এসআই ইকবাল জানান, রুহুল আমিন (২) গ্রেপ্তার করে এনেছিল। স্বীকার করে বলেন আমি দুতালা ছিলাম এবং নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। আরও বলেন সে শাহিন ডাকাতের বাই সে খুব খারাপ লোক শাহিনের নামে ডাকাতি মামলা ও মাদক মামলাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
ভালুকা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন জানান, লিখিত অভিযোগ দিয়ে থাকলে ঘটনাটি সত্য কিনা তা সিনিয়ররা তদন্ত করে দেখবেন।